Sunday, 13 January 2013

তৃষ্ণা

এভাবে আর কত লুকাবে মেঘের আড়ালে ?
মেঘের আড়াল থেকেও যে
চাঁদ উঁকি দেয় হৃদয়ের অভ্যন্তরে
তা কি তোমার অজানা ?
মেঘের আঁধার ভেদ করেও যে
আকাশে ভরা যৌবন আসে ,
রুপলী চন্দ্রিমায় উত্তাল হয় ভরা গাঙ -
সে কি নিছক ই তোমার কাছে কথকথা ?

এভাবে আর কত দিন ই বা
নিছক ই খেলার ছলে
প্রেমে ভাসাবে আমায় ?
কন্ঠের উত্তপ্ত নালী থেকে শোষণ করে নেবে
হৃদয়ের সকল প্রেমসুধা ?
আর তৃষ্ঞার্ত আমি কে
শব্দের প্রলোভনে মাতিয়ে রাখবে
সারা রাত জুড়ে -
ভাসিয়ে দেবে অধরা চুম্বনের গোপন বিলাসে ?
আর শেষ প্রহরে
চাতক পাখির তৃষ্ঞায়
দিয়ে যাবে কয়েক ফোঁটা লোনা জল --

ঠিক এভাবেই বলতে পারো -
আর কতদিন , কতভাবে
তুমি রয়ে যাবে আমার সীমার বাহিরে ?
তোমাকে যে পেতে চাই প্রেম
হৃদয়ের মহাকাশ জুড়ে ,
তোমার স্পর্শের তীব্র দহনে
নিজেকে ছারখার করে
তোমায় দিয়ে যেতে চাই হৃদয় নিঃশেষিত প্রেমের নির্যাস ,
আর দীর্ঘদিনের সঞ্চিত
প্রেমের মাধুর্যে ভরা কিছু স্বপ্ন ...||

Saturday, 12 January 2013

মৃত্যুর অভিরূপ

শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের নির্দেশে মৃত্যু হল আমার ,
মৃত্যু হল আমার জীবনের
আমার যৌবনের
আমার প্রবল আকাঙ্খার ।

আমার মস্তিষ্কের থেমে যাওয়া রক্ত ক্ষরণে
আমার নিষ্পাপ আগমন ,
মায়ের জঠরের ধিকিধিকি আগুন
আর পিতার সাফল্য ।

থেমে যাওয়া কন্ঠের নির্বাক ধ্বনিতে ভীড় করে আসে আমার
গোল্লা ছুটের কৌশোর,উদ্গ্রিবতায় বয়ঃসন্ধি ।
ধেয়ে আসে কৌশোরের শেষ পর্বের প্রেম
শীতলতায় অবশ আমার হাত
আমার পা ,
শুষ্ক বরফের ন্যায় ।

এগোচ্ছে ইতিহাস আমার অবয়বে ,
নিষিদ্ধতার হাতছানিতে আমার যৌবন ,
উন্মুক্ত নাভী তে ওষ্ঠের উষ্ণ চুম্বন ,
আর ,
এক বৃষ্টি সন্ধ্যায় আমার আত্মসমর্পণ ।

উল্টানো দুই চোখের মণি তে ফিরে আসে
রৌদ্রের সতেজতা আর দীপের প্রজ্বলিত আগুন ,
নিথর দেহে পরিশ্রান্ত
আমার কামনা বাসনা ।

থেমে যাওয়া হৃৎপিন্ডের
অলিন্দ নিলয় ধমনী শিরায়
থেকে গেলো আমার জীবনের উৎকৃষ্টতম ভালোবাসা
আর এক সন্ধ্যার আঁধারে অসমাপ্ত কিছু আদর ।

এভাবেই চিতার প্রজ্বলিত আগুনে
পুড়ে ছাই হওয়া
আমার অবয়বের উদ্গিরিত ধোঁয়ায় উর্ধ্বমুখী
আমার জন্মের অধিবাস
আর থমকে থাকা আমার দীর্ঘ নাভিশ্বাস ।।

Thursday, 10 January 2013

ঈশ্বরী

রাত দুটো পনেরো
ধীরে ধীরে গতি শ্লথ হল সময়ের
নীরব হল আকাশ বাতাস
মৃত্যু হল ঈশ্বরীর ।
হ্যাঁ ঈশ্বরী , আমারই এক সহোদরা
একই ভ্রূণে সৃষ্টি হয়েছিলো আমাদের
একই জঠরে লালিত হয়েছিলাম আমরা
ক্রোমোজামের আবর্তে ।
ও পৃথিবীতে এসেছিলো এক বিশুদ্ধতার বাতাবরণে –
ঈশ্বরীর জীবনীশক্তি ছিলো তীব্র –
ওর হাতে ছিলো ছিন্ন ভিন্ন জরায়ুর অস্ত্র
আর শরীরে ছিলো দংশিত রক্তাক্ত আগুন ।
হৃদয়ে ছিলো দৃপ্ত তেজ
আর মুখে ঈশ্বরের অভয়বাণী ।
ওর জন্মক্ষণে রোহিণী নক্ষত্র ছিলো চরমতম উজ্জ্বল ।
তাই শ্বাপদকূলের তীব্র দংশনে
ও উৎসর্গীকৃত হয়েছে মানবজাতির প্রতি ।
এই সময়ের চরমতম অবমাননা
আমরা নাকি সভ্যতার উৎকর্ষে পৌঁছেছি –
অন্তরে পাশবিক কামনা ।
ক্রমাগত সভ্যতার সাথে লড়ে
আমার বোন আজ অমৃতলোকে
সুধাময়ী হয়ে সুখে তে আছে –
কিন্তু ও সক্ষম আজ –
ও সক্ষম মানবতার ভিত নাড়াতে ।
আজন্ম লালিত অহংকারে বেড়ে ওঠা
শ্বাপদকুলের বংশবিস্তারে লেগেছে তার অভিশাপ –
বন্ধ হয়েছে মাতৃকূলের যোনিদ্বার –
বন্ধ্যা হয়েছে নারী আজ মানবতার শোকে ।
আজ সাধনা শুধুই মানবতার লক্ষ্যে ।
গভীর রাতের নির্জন সাধনায়
শুনতে পাই ঈশ্বরের অভয়বাণী –
সহস্র বছর পরে
পৃথিবী আবার ধন্য হবে
ঈশ্বরীর চরণস্পর্শে ।
এই পৃথিবীর বুকে সে বপন করবে
সত্যিকারের মানবতা ।
সেদিন শুধু মানবতা নয়
নির্ভীক মানবায়ন হবে আমাদের মূল মন্ত্র ...।।

Saturday, 5 January 2013

ইচ্ছে ডানা

খুব ইচ্ছা করে
আর ও একবার নীল শাড়ীতে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে হাজির হই তোমার সামনে -
ট্র্যাফিক জ্যাম আর নাগরিক ভিড়ে তোমায় খুঁজে নিয়ে
ভাসিয়ে দেই তোমায় আমার ঐ রঙিন বিকেলে -
তার পরে হঠাৎ -ই ঝুপ করে নেমে আসা ব্যাস্ত সন্ধ্যায়
তোমার হাতখানি ছুঁয়ে -
পরিযায়ী পাখির তীব্র আবেদনে হারিয়ে ফেলি !
হ্যাঁ নিজেকেই হারিয়ে ফেলি আবার |

রিক্যাপ


লাইফ চিনবি চল --
পনেরো মিনিট হেঁটে
তুই আর আমি মুখোমুখি
তিন টে পাঁচের বনগাঁ লোকালে
সঙ্গে নাভিশ্বাস ওঠা জনজীবন
আর ঘাম মাখা তাসের আসর --
নো স্মোকিং ট্রেনে টুকটাক
বিড়ি সিগারেটের উড়ন্ত ছাই --
হাঁপা হাঁপি দাপা দাপি -
এর ই মাঝে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছুঁয়ে যাওয়া শরীর --
আমরা দুজন প্রেমিক প্রেমিকা
ভিড়ের মধ্যে ছোঁয়াছুঁয়ি হাতে -
যেন উঠে আসতে চায় দীর্ঘদিনের জমানো নাভিশ্বাস --
ক্রমাগত ছুঁয়ে যেতে থাকি শহুরে উষ্ণতা
গ্রাম্য সবুজতা
অনুভূতির মিশেলে মৃত্যু হচ্ছে
এক হীম শীতল সম্পর্কের -
মানুষের কোলাহলে --
তুই হাসছিস আর হাসছিস
বলছিস
বাপের এক মাত্র মেয়ে
নিজের চৌহোদ্দি ছাড়িয়ে দেখ
ইট'স লাইফ
ইট'স রিয়েল ওয়ার্ল্ড
ভালোবাসতে পারিস তো এদের কে নিয়ে বাঁচতে শেখ –
নচেৎ আমার ছারপত্র নিয়ে হাঁটা দে অন্য পথে
প্রেম কে অমান্য করে |
আমি ভাবছি আর ফিরছি
ফিরছি ছশো বত্রিশ দিন
চার ঘন্টা পনেরো মিনিট আগে
চল্লিশ টাকায় কাটা টিকেটে ফ্লপ সিনেমার
ফাঁকা সিনেমা হল টার অন্ধকারে …||


কলকাতা ।